অশোকের ধম্ম নীতি

অশোকের ধম্ম নীতি

অশোকের ধম্ম

অশোকের অনুশাসন অর্থাৎ ধর্ম লিপি যাতে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে সে কারণেই অশোক তার শিলালিপি গুলি রেখে গিয়েছিলেন। প্রাকৃত ধম্ম শব্দটি সংস্কৃত ধর্মের সমার্থক। অশোকের গান্ধারী প্রয়োগে ধর্ম এর আক্ষরিক অর্থ হলো যেটিকে দ্রুত ধারণ করতে বা রাখতে হয় অথবা যা স্থির এবং দৃঢ়। ধর্ম শব্দটি ঋকবেদে এবং পরবর্তী রচনায় রীতি বা আইন অর্থে পাওয়া যায়, যেখানে এইসব আইনে আরো গভীরতর অর্থে দায়িত্বের নিদান দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালের বৈদিক রচনায় যা ধর্মসুত্র নামে পরিচিত সেখানে ধর্ম শব্দটি বুদ্ধের মতবাদ বা শিক্ষার সমার্থক। সেখানে এই পরিচিতসূত্রে বুদ্ধ এবং সংঘের কাছে একজন মানুষ ভিক্ষা করে।

দুটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোন স্থানে উপরোক্ত উদ্দেশ্যে অশোক ধর্ম শব্দটি ব্যবহার করেননি। দুটি ব্যতিক্রমের একটি তার বৈরাট প্রস্তর অনুশাসনে আবিষ্কৃত, যেখানে তিনি বুদ্ধ, ধম্ম এবং সংঘের প্রতি তার বিশ্বাস ঘোষণা করেছেন। বিশ্বাসের এই বৌদ্ধ নিয়ম নীতির স্বপক্ষে প্রাচীনতর প্রস্তর লিপি আমাদের জন্য স্বাক্ষর রেখে গেছেন। শিলালিপিতে উৎকীর্ণ অশোকের বিবৃতি থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে তিনি যে ধর্ম প্রচার করেছিলেন সেটি প্রকৃতপক্ষে মানুষের সৎ আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির একটি আকাঙ্ক্ষিত রূপ আমরা দেখি। যে নীতিটি সবচেয়ে অধিক বার উপস্থিত সেটি হল জীবে দয়া এবং তাদের আঘাত না করা। ত্রয়োদশ প্রস্তর অনুশাসন আমাদের মনে এই প্রত্যাশা জায়গায় যে কলিঙ্গ বিজয়ের সময়কালে নির্বিচার হত্যা আর মানুষের যন্ত্রণায় তার মনে যেহেতু এই অনুতাপ সঞ্চিত হয়েছে সে কারণেই এই অনুশাসন অনুসারী অশোক আঞ্চলিক বিজয় অবদান প্রত্যাখ্যান করে ধর্ম বিজয়ের পথ অনুসরণ করেছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তার কাজের জন্য মানুষের যে যন্ত্রনা তার ফলে তার অনুশোচনা হয়েছিল কিন্তু করুণার এই মনোভাব পরবর্তীকালে প্রাণীগুলো অব্দি প্রসারিত হয়। সে কারণে বিষয় অনুযায়ী করুনার পাত্র হিসেবে জীবের উল্লেখ্যে প্রাণীগুলো যুক্ত হয়েছে। অশোক স্বয়ং যে নির্বিচারে প্রাণী হত্যার বিরুদ্ধে কিছু মাত্রই তাদের সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। অনুশাসনে প্রকাশ্যে অনুমোদিত না হলেও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবেই এই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির আত্তীকরণ পরিলক্ষিত হয়।

উপস্থিতির সংখ্যা বিচারে এরপরে যে নীতি আলোচনা এসে পড়ে সেটি হল বিভিন্ন স্তরে মানবিক সম্পর্ক। প্রথমে আসে মাতা পিতার প্রতি আনুগত্যের নির্দেশ সে সময় সমাজ নিশ্চিত রূপেই পুরুষ শাসিত অতএব সেখানে এরকম ক্রম বিন্যাসে আদেশ ঘোষণা বেশ অদ্ভুত বোধ হয়। বর্তমান ভারতে আমরা যে বলি মা-বাপ, সেই শব্দে সামাজিক অবস্থার নির্দেশ করা হয় না। গুরুজনদের প্রতি আনুগত্য, এই পরবর্তী নির্দেশক অনুরূপে পরিবার বহিঃস্থ গোষ্ঠী বন্ধন এর একটি দৃঢ় উচ্চারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। যে বন্ধনে গোষ্ঠী রাজনীতি সংবাহক হিসেবে সমস্ত গুরুজনেরাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধু আত্মীয় পরিজনদের প্রতি উদারতা ইত্যাদি মনোভাবের প্রস্তাবটিও সাধারণভাবে ওই একই শ্রেণীর অন্তর্গত। এখনো পর্যন্ত ব্রাহ্মণ্য পরস্পরের পরম্পরার বিরোধী কোন নির্দেশ এখানে নেই কিন্তু অনুশাসনে কোথাও বর্ণ প্রসঙ্গে একটি শব্দ উচ্চারিত হয়নি এ বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। শিলালিপি সমূহের সমগ্র বয়ানে বর্ণ বা জাতি শব্দের সন্ধান করা বৃথা। অবশ্য গুরুজনদের প্রতি আনুগত্যের নির্দেশের অন্তরালে বাস্তবে সেই গুরুজনের প্রতিষ্ঠিত সামাজিক নিয়ম কানুনের প্রতি আনুগত্যের প্রত্যাশায় করা হয়েছে আর সে নিয়মকানুন অবশ্যই বর্ণ ব্যবস্থার নিয়মে প্রতিফলিত। এই বিতর্ক উঠতেই পারে এবং এমন হওয়া সম্ভব তবুও বর্ণ ব্যবস্থাকে সুবিধা দানের এমন তির্যক ভঙ্গি কেন গ্রহণ করা হলো সে প্রশ্ন কিন্তু থেকে যায়।

নিঃসন্দেহে অনুশাসনে বিশেষভাবে উল্লেখিত দাস ও ভৃত্যদের, সেই সঙ্গে দরিদ্র ও হতভাগ্যদের যাদেরকে কপন ও বলাক বলা হয়েছে, শোভন ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশ গুলি আধুনিক পাঠকদের অধিকতর মনোযোগ আকর্ষণ করবে। কোন রাজকীয় অধ্যাদেশে দরিদ্র এবং ক্রীতদাসদের প্রতি এমন মনোযোগ খুব কমই চোখে পড়ে। এরই সঙ্গে অতিরিক্ত সম্পদকে নিন্দা এবং অধিকারে সংযমের ঘোষণা করা হয়েছে।

অশোকের আরো একটি সূত্রে এই একই মনোভাবের অনুরোধ লক্ষিত হয়। এদের নিছকই তার ভক্তি উন্মাত্মতা হিসেবে চিহ্নিত করে আমরা নিশ্চয়ই বাতিল করে দেব না। ‘সমস্ত মানুষই আমার সন্তান’  ‘সব মনিষে ফজা মম’ পৃথক দুটি প্রস্তর অনুশাসনের উভয় স্থানে তিনি লিখেছেন “এবং আমার সন্তানদের যেমন এখানে এবং পরবর্তী জগতে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা এবং সুখ আমি দিতে চাই। সমস্ত মানুষের জন্য আমার তেমনি আকাঙ্ক্ষা” তার প্রথম মাইনর প্রস্তর অনুশাসনে অশোক সমস্ত মানুষ এই শব্দার্থ সুস্পষ্ট করে দিয়েছে সমস্ত অর্থে বা মহান নয় একেবারে নিম্ন পর্যায়ের মানুষ ও বোঝায় এরাও ধম্ম তে নিজেদের উন্নত করতে পারে। দশম প্রস্তর অনুশাসনে তিনি আরও অগ্রসর হলেন এবং ঘোষণা করলেন যে নিম্ন স্তরের মানুষের তুলনায় উচ্চপদস্থ মানুষের পক্ষে নিজেকে উন্নত করা অনেক বেশি কঠিন কাজ। প্রচলিত যে ধর্মে সমস্ত ধর্মীয় গুনাগুনের উচ্চ বর্ণের মানুষের অধিকার অশোকের এই ঘোষণায় তার সম্পূর্ণ বিপরীত এক ভাষ্য পাওয়া যায়।

অশোকের সপ্তম এবং দ্বাদশ প্রস্তর অনুশাসনে তার ধর্মের বার্তা যে সমস্ত ধর্মাবলম্বী মানুষের উদ্দেশ্যেই উচ্চারিত সে কথা বলাই বাহুল্য। সপ্তম স্তম্ভ শাসনে শুধুমাত্র বৌদ্ধ সংঘের প্রতি তার পৃষ্ঠপোষকতা উচ্চারিত হয়নি; সমভাবে ব্রাহ্মণ আজীবক এবং জৈনদের উদ্দেশ্য তা উচ্চারিত হয়েছে। অতএব অশোক যে ব্রাহ্মণ এবং শমনদের প্রতি উদারতা প্রদর্শনে আহ্বান জানাবেন সেটি খুবই স্বাভাবিক। শমন শব্দটি সাধারণভাবে সমস্ত সাধু সন্ন্যাসিনী এবং যোগীদের বোঝায়।

অশোক তার সপ্তম প্রস্তর অনুশাসনে এই আকাঙ্ক্ষার ব্যক্ত করেছিলেন যে সমস্ত গোষ্ঠীর মানুষেরা সর্বত্র বসবাস করবে। ধনচারী মুনি ব্যতিরেকে কোন যৌগিক সম্প্রদায় কে জনপদে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হবে না এবং এই সম্প্রদায় যাদের বর্ণ নেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই পশমদা শব্দটি ব্যবহৃত তারা অন্যান্য কথিতসহ কোন শহরে কেবলমাত্র শ্মশান বাদ রেখে আর কোথাও বসবাস করতে পারবে না। অর্থশাস্ত্রের এই ঘোষিত নিয়মের সম্পূর্ণ বিপরীত রয়েছে অশোকের প্রতিশ্রুত স্বাধীনতা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কারণেই অশোক আত্মসংযম, কথনে আত্মসংযমকে একটি প্রয়োজনীয় শর্ত হিসেবে গণ্য করতেন। দ্বাদশ প্রস্তর অনুশাসনে তিনি পারস্পরিক বাক্য বিনিময়ের পক্ষে সওয়াল করেছেন যার সাহায্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে সমৃদ্ধ হতে পারে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন বৈরিতা ছিল কিনা এবং ইতিমধ্যে সর্বত্র পর্বে সরলতা বিতরণ ছিল কিনা সে আলোচনা এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নয়।

ব্যক্তি মানুষের অন্তর আত্মার নিকটে অশোক যে দাবি করেছিলেন সেটিও তার ধর্মের একটি দিক। তিনি দাবি করেছিলেন সত্যকথন আত্মসংযম বিশেষত কথনে আত্মসংগ্রামের চর্চা, শুদ্ধতা বিশেষত চিন্তনে সুদ্ধতা, হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা, ক্রোধ, গর্ব এবং ঈর্ষার মনোভাব ত্যাগ। নবম প্রস্তর অনুশাসনে তিনি স্বীকার করেন যে শুভ লক্ষনের জন্য কিছু আবার সম্পাদন করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন যে যাই হোক না কেন নারীরা এমন অসংখ্য আচার পালন করে কিন্তু বস্তুত তিনি এজাতীয় আচারের কার্যকারী থেকে বাতিল করে দেন। ধর্ম নির্দেশিত আচরণেই একমাত্র প্রকৃত ফলাফল সম্ভব, প্রতি পরিবারে এই বার্তা পৌঁছে দেবার জন্য তিনি পিতা পুত্র ভ্রাতা স্বামী বন্ধু পরিজন এমনকি প্রতিবেশীদের উদ্দেশ্য আবেদন জানিয়েছেন। প্রথম প্রস্তর অনুশাসনে পশুগুলির উদ্দেশ্যে আয়োজিত ধর্মীয় সম্মেলন কে তিনি অভিযুক্ত ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। অশোকের ধর্মের প্রাথমিক ধারা জীবে আঘাত না করা। তার সঙ্গে এই টিকে থাকা বৈদিক আচারের নিশ্চিত দ্বন্দ্ব ছিল সাহায্য দানের পরিকল্পনা অনুষঙ্গ হিসেবে। একটি মাত্র আচরই মনে হয় অশোকের অনুমোদন লাভ করেছিল তা হলো উপবাস পালন করা।

ব্যক্তি মানুষের উদ্দেশ্যে ধর্ম অনুসরণের আবেদন জানানোর সময় অশোক প্রায়শই এর ফলের কথা বলতেন। এখানে এই জগতে ফল লাভের প্রতিশ্রুতি তিনি দিতেন অবশ্য শুভাচার পালনের উদ্দেশ্য যে, তাই সে কোথাও তিনি স্বীকার করতেন কিন্তু ধর্ম সেই সঙ্গে বড় জগতে ফল দেয়। অশোক এমনকি স্বর্গ লাভেরও প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। অশোকের ধর্মে মূর্তি বা পবিত্র আত্মার কোন স্থান নেই; এখানে স্থান রয়েছে কর্মের। প্রথম মাইনর প্রস্তর অনুশাসনে দেবগনের সঙ্গে মানুষের একত্র মেলামেশার উল্লেখ এবং চতুর্থ প্রস্তর অনুশাসনে সাধারণ মানুষের দৈব রূপ প্রদর্শন অবশ্যই এক ধরনের অলংকারী অভিব্যক্তি।

আচার-আচরণে যেসব নীতির কথা অন্যান্য নৈতিক বিশ্বে বলা হয়েছে অশোকের প্রচারিত নীতির সঙ্গে কখনো কখনো তাদের মিল পাওয়া যাবে এমন প্রত্যাশায় স্বাভাবিক। এমনকি অর্থশাস্ত্রেও এগুলি উদ্ধৃত। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অশোক তার ব্যক্তিগত আসক্তির কথা মুক্ত কন্ঠে স্বীকার করায় তারই ভিত্তিতে বৌদ্ধ পরম্পরায় অশোকের অনুশাসনের উৎস সন্ধানে আধুনিক পন্ডিতেরা স্বভাবতই অধিক তৎপর হয়ে উঠেছেন। ওই চারটি মহান সত্যের উল্লেখ অশোক করেননি। এ কথা সত্য অবশ্য পৃথক প্রস্তর অনুশাসনে প্রথমটিতে নিরপেক্ষ ন্যায় অথবা শুভ অর্থে আমরা মধ্যম শব্দের ব্যবহার পাই। অশোকের শিলালিপিতে প্রচুর সংখ্যায় এমন বা্ক্যাংশ সনাক্ত করা যায় যা প্রাচীন পালি অনুশাসনে যাদের জুড়ি রয়েছে। সুতরাং বুদ্ধের শিক্ষা সংক্রান্ত গাথা যেগুলি তার সময়কালে একত্রিত করা হয়েছিল তারই প্রভাব যে অশোকের অনেক বাণী এবং নির্দেশের পড়েছে সে কথা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে অশোকের বৈরাট অনুশাসন তাৎপর্যপূর্ণ। প্রভূত মৌখিক পাঠবিসংবাদের পর বুদ্ধের সাতটি ধর্ম পরিত্যাক্ত এর নির্বাচিত তালিকা ও অনুশাসনে অশোক প্রস্তুত করেছেন। এই 7 টি পাঠ সনাক্ত করতে দীর্ঘদিন কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেননা এদের কয়েকটি শিরোনাম পরিবর্তিত হয়েছে অথবা অনেকগুলি পাঠে একই শিরোনাম রয়েছে। যে অনুচ্ছেদগুলি অশোক নিজের ধর্ম সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির অনুরূপ এবং ভাবনার সমাপ্তি বলে মনে করেছেন সেগুলি নির্বাচনের একটা প্রবণতা এখানে লক্ষ্য করা যায়। সাধারণ মানুষ কিংবা সংসারে মানুষের জন্য মঙ্গলময় নৈতিক জীবন সম্পর্কে যেসব কথা বুদ্ধের মুখনিঃসৃত বলা হয় তার সঙ্গে অশোকের ধর্ম অত্যন্ত সঙ্গতিপূর্ণ।

বুধের বাণী এবং অশোকের ধম্ম এর মধ্যে যোগসূত্রের প্রমাণ বিচারের সময় আমাদের অবশ্য স্মরণ রাখতে হবে যে বৌদ্ধ ধর্মে জনসাধারণ একেবারেই উপর মহলের বিষয়। এ এক সন্ন্যাস ধর্ম যেখানে মানুষ চলেছে নির্বাণ অভিমুখে অথবা জন্ম পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি এবং সে কারণেই জনসাধারণের নৈতিক বৃদ্ধির চেয়েও সংঘের শৃঙ্খলা সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনীদের ক্রমপর্যয় তাদের অধিক ভাবনার বিষয়। অশোক যে ধর্ম প্রচার করেছেন সেটি এর বিপরীত নিতান্ত সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি আবেদন জানিয়েছেন এবং মানুষটির সমস্ত পার্থিব আকাঙ্ক্ষা বজায় রেখে অশোক তাকে আপন ধর্মের ছত্রছায়ায় আনতে চান। নিশ্চিত রূপে ঠিক সেই কারণেই অশোক তার শ্রোতাদের এমন একটি নৈতিক পথে চলবার জন্য আহ্বান জানান যে পথ কোন সাধকের পথে নিব্বানে পৌঁছায়নি, সে পথ গেছে স্বর্গ অভিমুখে এই প্রথমোক্ত শব্দটি অশোকের অনুশাসনের কোথাও স্থান পায়নি। বুদ্ধ কখনো কখনো জনসাধারণের উদ্দেশ্যে যা প্রচার করেছেন অশোক সম্ভবত তারই ভিত্তিতে এই নৈতিকতা গড়ে তুলেছেন। কিন্তু কখনই তিনি তার মৌলিকত্ব থেকে বিচ্যুত হননি। এমনকি আমরা যদি একথা অস্বীকার করে নিজে অশোকের ধর্মের উৎস হলো বুদ্ধের শিক্ষা তবুও সেই উৎসে যা উপরিতলে ছিল তাকেই তিনি বিশিষ্ট নির্বাচনে কেন্দ্রীয় করে তোলার অনবদ্য কাজ করেছিলেন। সেই সঙ্গে তাদের বিশেষভাবে চিহ্নিত করে আরো বিশালতায় ব্যাপ্ত করেছেন তিনি। তাছাড়া যা ছিল প্রচারের বিষয় তাকে তিনি প্রাত্যহিক অভ্যাসের পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টা করেছিলেন। কেননা তার নিজের দৃষ্টিতে সমাজ এবং রাষ্ট্র উভয়কেই করুণার আহবানে সাড়া দেওয়ার যোগ্য করে তোলা ছিল তার উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে আমাদের সৌন্দরতার মাত্রা যাই হোক না কেন এ প্রশ্নের যে দায়িত্ব তিনি নিয়েছিলেন তা এখনো পর্যন্ত অসাধারণ জীবন দৃষ্টির একটি উদ্যোগ বলে মনে হয়।

<> আরও পড়ুন -> এলাহাবাদ প্রশস্তি

  • Topics Covered : 

অশোকের ধম্ম নীতি আলোচনা কর

অশোকের ধম্মের বৈশিষ্ট্য

অশোকের ধম্ম টিকা, অশোকের ধম্ম টীকা

অশোকের ধম্ম pdf

অশোকের ধম্ম এর বৈশিষ্ট্য এবং তার প্রচার

অশোকের ধম্মের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

অশোকের ধম্ম কি

অশোকের ধম্মের প্রকৃতি আলোচনা করো

Leave a Comment